• মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কুষ্টিয়ার শহীদ আবরার ফাহাদ ষ্টেডিয়াম উদ্বোধন করলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহামুদ বর্ণিল পরিবেশে কুষ্টিয়া জেলা সমিতি ঢাকার বার্ষিক বনভোজন ও মিলনমেলা অনুষ্ঠিত ঢাকায় অনুষ্ঠিত ১৯ তম ডিটিজি এক্সপো শেষ হয়েছে গতকাল বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শেখ সাদী মোবাইলে টিকটক দেখা বন্ধ করে, পড়ার সময় পড়া ও খেলার সময় খেলতে হবে বিশিষ্ট সমাজসেবক আলহাজ্ব আলিমুদ্দিন শেখের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ বিশিষ্ট সমাজসেবক আলহাজ্ব আলিমুদ্দিন শেখের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ বিশিষ্ট সমাজসেবক আলহাজ্ব আলিমুদ্দিন শেখের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ কুষ্টিয়ার পদ্মায় ধরাপড়া বিশাল কুমিরটি বন বিভাগের হেফাজতে সাম্প্রতিক অতিথি মন্তব্য প্রতিবেদন হাসিনা পদত্যাগ করেন নাই, তিনি ক্ষমতা হারিয়েছেন. রাষ্ট্রপতির অপসারন সংকট সৃষ্টি করবে না

৪৪ বছরেও গঙ্গাবাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি

Reporter Name / ১৩৩ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৪

তারিকুল হক তারিক
কৃষিখাতে উৎপাদন বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক ও জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন, পদ্মার পানি সংরক্ষন, খরা মৌসুমে সেচ সুবিধা, বন্যা নিয়ন্ত্রন, লবনাক্ততা রোধ এবং ভুগর্ভস্থ পানি আয়ত্বে রাখার উদ্দেশ্যে কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীতে গঙ্গাবাঁধ নির্মাণের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল দীর্ঘ ৪৪ বছর পরও সরকারের আন্তরিকতার অভাবে সেই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। এই অভিযোগ করেছেন গঙ্গাবাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির নেতৃবৃন্দ। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর গ্রামের পদ্মা নদীর পাড়ে যে স্থানে প্রকল্পটির ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করা হয়েছিল সে স্থানটি এখন গোচারন ভূমিতে পরিণত হয়েছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কাছে এণ্টি ফারাক্কা বলে পরিচিত এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত না হওয়ায় প্রতিবছর ৬৫ লাখ একর জমি সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলেও এঅঞ্চলের কৃষকরা জানিয়েছেন। পাশাপাশি খরাজনিত কারনেও নষ্ট হচ্ছে লাখ লাখ একর জমির ফসল। ১৯৮০ সালের ২৭ ডিসেম্বর প্রস্তাবিত এই গঙ্গাবাঁধ প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করা হলেও এই বাঁধ নির্মানের কাজ আর শুরু করা হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, পঞ্চাশের দশকে কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর এলাকায় ওই সময়েই প্রস্তাবিত এই প্রকল্পটি একজন বিদেশী বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো হয়েছিল। সেটিকে ক্রুক মিশনের মতামত বলা হয়ে থাকে। পরবর্তীতে ক্রুক মিশনের সুপারিশে ১৯৫৯ সালে ইষ্ট পাকিস্তান পাওয়ার এন্ড ওয়াটার ডেভলপমেন্ট অথরিটি গঠন করা হয় এবং ১৯৬১ সালে সাবেক ওয়াপদা গঙ্গাবাঁধ বাস্তবায়নের দায়িত্বে নেয়। এরপর ১৯৬৩ সালে মার্কিন প্রতিষ্ঠান ঠ্যামস, ১৯৬৪ সালে আরেকটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান আইকো এবং ১৯৬৮ সালে স্থানীয় কারিগরি প্রতিষ্ঠান এসোসিয়েটেড কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স গঙ্গাবাঁধ প্রকল্পের চুড়ান্ত কারিগরি পরীক্ষা সম্পন্ন করে। পরে ১৯৬৯ সালের শেষের দিকে গঙ্গাবাঁধ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু তদানীন্ত পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্যে তা স্থগিত হয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহত্তর কুষ্টিয়াসহ আশপাশের জেলা গুলোর মানুষের বছরে তিনটি ফসল উৎপাদনের নিশ্চয়তার লক্ষে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ৯ বছর পর ১৯৮০ সালে ওই প্রকল্পটি পুনরুজ্জীবিত করেন এবং ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর তৎকালীন বন্যা ও পানি সম্পদ মন্ত্রী কাজী আনোয়ারুল হক কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচরে পদ্মার তীরে গঙ্গা বাঁধ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করেন। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সেসময় প্রকল্পটির কাজ দ্রুত শুরু করার অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমান নিহত হবার পর গঙ্গা বাঁধ প্রকল্পের কাজ আর অগ্রসর হয়নি বরং ১৯৯৩ সালের ৫ এপ্রিল গঙ্গাবাঁধ নির্মাণের জন্যে ১৯৮১ সালে কেনা বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী গোপন নিলামে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেয়া হয়।
এঅঞ্চলের কৃষকরা জানিয়েছেন, ৪৪ বছরেও এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত না হওয়ায় শুধু ফসল উৎপাদনেই ব্যাহত হচ্ছেনা এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। আর প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চাহিদা অনুযায়ী সেচ সুবিধার পাশাপাশি বছরে ৩টি ফসলের নিশ্চয়তাসহ দেশের শতকরা ৩৭ ভাগ কৃষিশিল্প, মৎস্য সম্পদ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। বিশেজ্ঞরা বলেছেন,এশিয়ার বৃহত্তম গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ ও পুর্নবাসন প্রকল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলেও গঙ্গাবাধ প্রকল্প বাস্তবায়ন ছাড়া কোন পথই নেই।
কুষ্টিয়ার বিত্তিপাড়া গ্রামের কৃষক হায়দার আলি জানান, পদ্মা নদীতে গঙ্গাবাঁধ নির্মান না হওয়ায় পানির অভাবে ঠিকমতো ফসল উৎপাদন হচ্ছে না। প্রতি বছর খরা মৌসুমে জিকে প্রকল্প পদ্মায় পানি আভাবে আমাদের সেচের পানি দিতে পারে না। পাশাপাশি গোটা দক্ষিণাঞ্চলে মরুকরণসহ পরিবেশ বিপর্যয় হয়। ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর জন্যে অবিলম্বে গঙ্গাবাঁধ নিমান করা জরুরী। একই কথা বলেন জেলার সদর উপজেলার বারখাদা গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ ও মশান এলাকার কৃষক আরশেদ আলী।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, স¤পূর্ণ পদ্মা নদীর পানির উপর নির্ভরশীল দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প গঙ্গা কপোতাক্ষ (জিকে) প্রকল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে গঙ্গাঁবাধ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতেই হবে। কুষ্টিয়াবাসীর প্রানের দাবী এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সুবিধা বঞ্চিত এ অঞ্চলের ৬৫ লাখ একর জমি সেচ সুবিধার আওতায় আসবে এবং কৃষকের উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে লবণাক্ততা রোধ, ভূর্গস্থ পানি আয়ত্বে রেখে বছরে তিনটি ফসল উৎপাদনের নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে। এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়িত না হওয়ায় এদেশের নদীগুলো পলিমাটি ও বালিতে ভরাট হয়ে যাচ্ছে এবং শুষ্ক মৌসুমে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলির ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সেচ সংকটসহ আবহাওয়ার উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া উন্নয়ন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন আশরাফ জানান, এঅঞ্চলের কৃষকের এবং মানুষের স্বার্থ সংরক্ষনের জন্যে প্রস্তাবিত গঙ্গাঁবাধ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্যে আমরা দীঘদিন ধরে মিছিল মিটিং ও আন্দোলন করেছি। কিন্তু বিগত নির্বাচিত সরকার প্রধানদের আন্তরিকতার অভাবে এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা বর্তমান সরকারের কাছে অবিলম্বে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্যে জোর দাবি জানাচ্ছি।
গঙ্গাঁবাধ বাস্তবায়ন কমিটির ততকালীন সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন বলেন, গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের আশা আকাংখার প্রকল্প গঙ্গাঁবাধ বাস্তবায়ন না হলে গোটা দক্ষিণাঞ্চল মরুকরণ ও পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এর বিরুপ প্রতিক্রিয়া এঅঞ্চলের মানুষের মধ্যে শুরু হয়েছে। তাই অবিলম্বে প্রস্তাবিত গঙ্গাঁবাধ প্রকল্প বাস্তবায়ণ ছাড়া কোন উপায় নাই।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা এবং পানির অভাবে পদ্মা ও গড়াই নদী ধবংসের হাত থেকে রক্ষার জন্যে যৌথ ভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ ওয়াটার পাটনারশীপ এবং ফোকলোর রিসার্স ইনস্টিটিউট। ফোকলোরের সভাপতি ড.আনোয়ারুল করিম এবিষয়ে এ প্রতিবেদককে জানান, গঙ্গাবাধ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় এঅঞ্চলের ৫ কোটি মানুষ ও পরিবেশ আজ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। পানির অভাবে নদনদী গুলো মৃত হয়ে পড়ায় মিঠা পানিতে লবনাক্ততা বাড়ছে এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল মারাত্বক মরুকরণ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন বাংলাদেশকে বাঁচানোর জন্যে জাতীয় ভাবে একটা প্রস্তাব নিয়ে এখনি গঙ্গাবাধ নির্মান করা না হলে এমন একটা সময় আসবে যখন আমাদের মা দের এবং মেয়েদের অলংকার বিক্রি করে হলেও এই বাঁধ নির্মান করতেই হবে। তিনি অভিমত দেন, গঙ্গাবাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় ২০২০ সাল থেকে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ১৩ টি জেলা মরুভুমিতে পরিণত হতে চলেছে।
এব্যাপারে গঙ্গা ব্যারেজ সমিক্ষা প্রকল্পের একজন সাবেক (ঢাকা) নির্বাহী প্রকৌশলী জাফর নিয়াজ এখন খবরকে জানান, ভারতের ফারাক্কা বাঁধ চালু হবার পর প্রয়োজনীয় পানির অভাবে দেশের নদ-নদীগুলো স্বাভাবিক নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় আমাদের দেশের পরিবেশের জন্যে গঙ্গা বাঁধটি অপরিহার্য হয়ে পড়ে। বিগত সরকার প্রধানদেরও আন্তরিকতা ছিল,বর্তমান সরকারেও রয়েছে। এছাড়া এব্যপারে সমিক্ষাও চলছে এবং এটি কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে সেটি সরকারের প্রকৃয়াধীন রয়েছে।
একটি সুত্র জানায়, প্রস্তাবিত এই প্রকল্পটির জন্যে ১৯৮০ সালের হিসাব মতে ২শ ২০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রাসহ ১ হাজার ১শ ৩১ কোটি টাকার ব্যায় ধরা হয়েছিল। সে সময় প্রকল্পের পেছনে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যায়ও করা হয়েছিল। তার মধ্যে প্রকল্পটির পাশে ৬ লাখ টাকা ব্যায়ে একটি রেষ্ট হাউস এবং ৩ কোটি টাকা খরচ করে মডেল ষ্টাডি করা হয়েছিল। বর্তমানে প্রকল্প এলাকায় জরাজির্ণ সেই রেষ্ট হাউস আর ভিত্তিপ্রস্তরটি অস্তিত্বও বিলিন হয়ে গেছে।
প্রকল্পের তথ্যানুযায়ী জানাযায়, বাংলাদেশে গঙ্গার অংশ এবং পদ্মা নদীসহ ৩২টি নদী খনন করে জলাশয় নির্মাণের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং শুষ্ক মৌসুমে খরার প্রকোপ থেকে সেচের মাধ্যমে প্রায় ৬৫ লাখ একর জমি আবাদি রাখা,লবণাক্ততা রোধ, পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বাঁধের উপর দিয়ে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে বহুমুখী যোগাযোগ স্থাপন প্রকল্পের আওতাভূক্ত ছিল। ফারাক্কা বাঁধের ফলে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যা ও খরার কবল থেকে রক্ষার জন্যে এঅঞ্চলের সকল মহল গঙ্গাবাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবিতে এখনো সোচ্চার।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category