• মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কুষ্টিয়ার শহীদ আবরার ফাহাদ ষ্টেডিয়াম উদ্বোধন করলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহামুদ বর্ণিল পরিবেশে কুষ্টিয়া জেলা সমিতি ঢাকার বার্ষিক বনভোজন ও মিলনমেলা অনুষ্ঠিত ঢাকায় অনুষ্ঠিত ১৯ তম ডিটিজি এক্সপো শেষ হয়েছে গতকাল বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শেখ সাদী মোবাইলে টিকটক দেখা বন্ধ করে, পড়ার সময় পড়া ও খেলার সময় খেলতে হবে বিশিষ্ট সমাজসেবক আলহাজ্ব আলিমুদ্দিন শেখের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ বিশিষ্ট সমাজসেবক আলহাজ্ব আলিমুদ্দিন শেখের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ বিশিষ্ট সমাজসেবক আলহাজ্ব আলিমুদ্দিন শেখের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ কুষ্টিয়ার পদ্মায় ধরাপড়া বিশাল কুমিরটি বন বিভাগের হেফাজতে সাম্প্রতিক অতিথি মন্তব্য প্রতিবেদন হাসিনা পদত্যাগ করেন নাই, তিনি ক্ষমতা হারিয়েছেন. রাষ্ট্রপতির অপসারন সংকট সৃষ্টি করবে না

সাম্প্রতিক অতিথি মন্তব্য প্রতিবেদন হাসিনা পদত্যাগ করেন নাই, তিনি ক্ষমতা হারিয়েছেন. রাষ্ট্রপতির অপসারন সংকট সৃষ্টি করবে না

Reporter Name / ১৩০ Time View
Update : শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০২৪

॥চৌধুরী মনজুর এহসান॥

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম ও সিদ্ধান্তে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে জনগণের আস্থা অর্জন করা এবং প্রচলিত পুলিশ বাহিনীকে অপরাধ দমনে সক্রিয় করতে পারা। বর্তমান পুলিশ বিভাগ অতীতের পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থানে থাকার কারণে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারছে না, যা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং অপরাধী দমনে বাধা সৃষ্টি করছে। দীর্ঘকাল ধরে ক্ষমতায় থাকা আগের সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া পুলিশ বাহিনী তৎক্ষণাৎ রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা অর্জন করতে পারছে না, ফলে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা কঠিন হয়ে পড়ছে ।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারকে সংকটময় পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। পূর্ববর্তী সরকারগুলোর সময়কার উচ্চ ঋণ ও লুটপাটের কারণে বর্তমান সরকারকে একটি দুর্বল অর্থনীতি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। ব্যাংকিং খাতেও খেলাপি ঋণ ও অর্থপাচারের ফলে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে চাপ পড়েছে, যা মোকাবিলা করা এই সরকারের জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও রিজার্ভে হাত না দিয়েই সরকার দেড় বিলিয়ন ডলারের দেনা পরিশোধ করতে সক্ষম হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারকে একাধিক রাজনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে, যা সংবিধানে সরাসরি উল্লেখ নেই। এজন্য বৈধতার প্রশ্নে আদালত ডকট্রিন অব নেসেসিটি প্রয়োগ করলেও, সরকারকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশাসনিক সংস্কার এবং গণমানুষের চাহিদা পূরণে কাজ করতে হচ্ছে। আর এর মধ্যে আরো একটি সংকট সৃষ্টি করেছে রাষ্ট্রপতি এম সাহাবুদ্দিনের অপসারণ বা পদত্যাগ ইস্যু নিয়ে। ইতিমধ্যে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ শুরু করেছে। যাতে করে রাষ্ট্রপতির আভিসংবাসনের বিষয়টিকে সকল রাজনৈতিক দল ও মতের ঐক্য সৃষ্টি করা যায়।
রাষ্ট্রপতির অপসারণ নিয়ে আগে থেকে বিক্ষিপ্ত ভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দাবী তোলা হয়েছে। এই দাবী জোরদার হয় প্রবীণ সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেয়া রাষ্ট্রপতির একটা সাক্ষাতকারকে কেন্দ্র করে। যাতে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, সাবেক প্রস্থানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো পদত্যাগ পত্র বঙ্গভবনের কোথাও তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। কিন্তু তিনি সুপ্রীম কোর্টের রেফারেন্স দিয়ে শেখ হাসিনার যে প্রধানমন্ত্রী নেই সেটাও উল্লেখ করেন।
খুব সহজ সমীকরনে বোঝা যায় ঘটনাটি কি? ছাত্র জনতার গণ আন্দোলন যখন তীব্রতর হয়ে উঠে, প্রধানমন্ত্রী ১৪ দলের সাথে বৈঠক করে ২০ জুলাই আন্দোলনকারীদের দেখা মাত্র গুলির আদেশ জারি করা হয়। ইতিমধ্যে প্রায় ৩ শতাধিক আন্দোলনকারী নিহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেলে সরকার সেনাবাহিনীকে নিয়োগ করে। কিন্তু এতেও আন্দোলন দমানো সম্ভব হয় না। সেনাবাহিনী ছাত্র জনতার উপর গুলি চালাতে অস্বীকৃতি জানায়। পুলিশ এবং আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দলীয় ক্যাডার বাহিনীর ধারাবাহিক গণহত্যার ফলে আগষ্টের শুরুতে আন্দোলন আরো শক্তিশালী হয়ে উঠে। ১ আগষ্ট জামায়াত এবং এর অঙ্গসংঠন গুলোকে নিষিদ্ধ করে হাসিনা সরকার। ৬ আগষ্ট ছাত্রদের আহবানে গণভবন ঘেরাও কর্মসুচি একদিন এগিয়ে ৫ আগষ্ট ঘোষণা করা হয়। মূলত তখনই হাসিনা সরকার অচল হয়ে পড়ে। রাজধানী ঢাকায় প্রায় সব এলাকা ছাত্র জনতার দখলে চলে যায়। পুলিশ ভীত হয়ে পড়ে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় থানা আক্রান্ত হয় বিক্ষুব্ধ আন্দোলন প্রতিরোধে। এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি হয় শেখ হাসিনার পক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে কোনো বক্তব্য রাখার সুযোগ পর্যন্ত হাতে ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর বহনকারী গাড়ীবহর গণভবন থেকে প্রত্যাহার করে ফেরার পথেও আন্দোলনকারীদের আক্রমনের শিকার হয়।
এমনই অবস্থায় শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে সেই পদত্যাগ পত্র রাষ্ট্রপতির কাছে দিয়ে হেলিকপ্টার এবং বিমানে করে আরামে দিল্লী চলে যাবেন, এটা যারা ভেবেছেন তাদের রাজনৈতিক দুরদর্শিতার যে চরম অভাব আছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কারন, একজন প্রধানমন্ত্রী গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে পদত্যাগ করলে তিনি যে কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার হাতে আটক হতে পারেন, এটা অন্তত শেখ হাসিনার ভালো করে জানা আছে। আর ঐদিন তিনি আটক হলে তার জীবিত থাকা যে অনিশ্চিত এটা তিনি অবশ্যই জানতেন। তাই প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী যা হাসিনার নিজের মন্ত্রণালয় সেটার ক্ষমতা ব্যবহার করেই দেশত্যাগ করতে সক্ষম হয়েছেন। সুতরাং শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন নাই, তিনি ক্ষমতা হারিয়েছেন। এটাই সঠিক।

এবার আসা যাক বাংলাদেশের বর্তমান প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিন পদে বহাল থাকলে কিছু সম্ভাব্য সমস্যা হতে পারে সে প্রসঙ্গে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, বিরোধী দলের অসন্তোষ এবং আন্দোলনের ফলে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বাড়তে পারে। সেই সাথে পতিত সরকার ও আওয়ামী লীগ দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। যা দেশের শাসনব্যবস্থাকে দুর্বল করবে।
প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যার ফলে জনগণের প্রতিনিধিত্ব কমে যাবে। যদি সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থতা হয়, তাহলে প্রেসিডেন্টের প্রতি আস্থা বাড়ার সম্ভাবনা রয়ে যায়, যা দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি বিঘ্নিত করবে। সরকারের কঠোর অবস্থান দেশের বৈশ্বিক ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। অর্থনৈতিক নীতি ও পরিকল্পনার অপ্রতুলতা দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করতে পারে, যার ফলে মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে। মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অবহেলার কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনা বাড়বে, যা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে দুর্বল করবে। রাজনৈতিক সংকট ও অস্থিরতা সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে, যা জাতীয় ঐক্যকে দুর্বল করবে।
বাংলাদেশের বর্তমান প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিন যদি অপসারিত হন, তাহলে কিছু সম্ভাব্য সুবিধা হতে পারে।
নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে রাজনৈতিক পুনর্গঠনের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে, যা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা কমাতে সাহায্য করবে। নতুন প্রেসিডেন্ট জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হলে সরকারের প্রতি আস্থা বাড়াতে পারে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করবে। নতুন প্রশাসন মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিলে আন্তর্জাতিক মহলে সরকারের ভাবমূর্তি উন্নত হতে পারে। যদি নতুন প্রেসিডেন্ট গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন, তাহলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নত হতে পারে, যা বিদেশি বিনিয়োগ এবং সহযোগিতা বাড়াতে সহায়ক হবে। নতুন সরকারের নেতৃত্বে রাজনৈতিক বিভাজন কমে গেলে সামাজিক ঐক্য সৃষ্টি হতে পারে। সরকার প্রশাসন এবং প্রশাসনিক সংস্কার ও দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিলে সেবা প্রদান প্রক্রিয়া উন্নত হতে পারে।
সাহাবুদ্দিনের অপসারণের মাধ্যমে নতুন সুযোগ এবং পরিবর্তনের সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে, তবে এটি কিভাবে বাস্তবায়িত হয়, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
কোনো কোনো রাজনিতিকদের মতে এটা সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করবে বলে আলাচ্য হচ্ছে।
এখানেও সমাধান রয়েছে। ধরা যাক, অসুস্থতার কারনে যদি রাষ্ট্রপতির মৃত্যু হয় তখন সংবিধানের কোন ধারা মতে রাষ্ট্রপতি নিয়োগদান করা হবে? তবে সবকিছুর সমাধান রয়েছে মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের হাতে। এতে করে তেমন কোনো সংকট হবে বলে মনে হয় না।

লেখকঃ কুষ্টিয়ার প্রথম আধুনিক দৈনিক আন্দোলনের বাজার পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক। বর্তমানে কানাডা প্রবাসী।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category