• মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কুষ্টিয়ার শহীদ আবরার ফাহাদ ষ্টেডিয়াম উদ্বোধন করলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহামুদ বর্ণিল পরিবেশে কুষ্টিয়া জেলা সমিতি ঢাকার বার্ষিক বনভোজন ও মিলনমেলা অনুষ্ঠিত ঢাকায় অনুষ্ঠিত ১৯ তম ডিটিজি এক্সপো শেষ হয়েছে গতকাল বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শেখ সাদী মোবাইলে টিকটক দেখা বন্ধ করে, পড়ার সময় পড়া ও খেলার সময় খেলতে হবে বিশিষ্ট সমাজসেবক আলহাজ্ব আলিমুদ্দিন শেখের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ বিশিষ্ট সমাজসেবক আলহাজ্ব আলিমুদ্দিন শেখের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ বিশিষ্ট সমাজসেবক আলহাজ্ব আলিমুদ্দিন শেখের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ কুষ্টিয়ার পদ্মায় ধরাপড়া বিশাল কুমিরটি বন বিভাগের হেফাজতে সাম্প্রতিক অতিথি মন্তব্য প্রতিবেদন হাসিনা পদত্যাগ করেন নাই, তিনি ক্ষমতা হারিয়েছেন. রাষ্ট্রপতির অপসারন সংকট সৃষ্টি করবে না

দেশের ক্রীড়াঙ্গনের উর্বরভূমি কুষ্টিয়া………

Reporter Name / ১৫৩ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৪

জাহিদুল আলম জয়

‘সাংস্কৃতিক রাজধানী’ খ্যাত কুষ্টিয়া জেলার ক্রীড়ার রয়েছে আলোকিত ইতিহাস। অনেক গুণী ক্রীড়াবিদ এ জেলার নামডাক সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম ক্রিকেটার হাবিবুল বাশার সুমন, আহমেদ কামাল কর্ণেল, ‘বাংলাদেশের ম্যারাডোনা’ খ্যাত ফুটবলার সৈয়দ রুম্মান বিন ওয়ালী সাব্বির, মামুন জোয়াদ্দার, শুটার সাইফুল আলম চৌধুরী রিংকী, আরদিনা ফেরদৌস আঁখি, সাঁতারু রুবেল রানা, সবুরা খাতুন, প্রয়াত অ্যাথলেট শাহ্ আলমসহ আরও অনেকে। এছাড়া কুষ্টিয়ার ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলার নাম লাঠিখেলা। আধুনিককালেও গ্রামাঞ্চলের মানুষের বিনোদনের অন্যতম প্রধান উৎস এই খেলা।

বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে কুষ্টিয়া একটি সফলতম জেলা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ দেশের সাফল্যের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই অবদান রয়েছে কুষ্টিয়ার ক্রীড়াবিদদের। বাঙালী জাতির অহংকার মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে ও পরে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নেতৃত্বের পর্যায়ে ছিল কুষ্টিয়ার খেলোয়াড়েরা।
কিন্তু সেই সময়ের রমরমা অবস্থা বর্তমানে নেই। যেটুকু রয়েছে তা নিতান্তই গুটিকয়েক গুণী মানুষ ও খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার ফসল। যুগে যুগে কুষ্টিয়ার ক্রীড়াঙ্গন আলোকিত করে এসেছেন অসংখ্য কৃতী ক্রীড়াবিদ। প্রধান দুই খেলা ক্রিকেট ও ফুটবল ছাড়াও শূটিং, সাঁতার, অ্যাথলেটিক্স, দাবাসহ বিভিন্ন ক্রীড়ায় আলো ছড়িয়েছে এ জেলার ক্রীড়াবিদরা। অবশ্য বর্তমানে সাফল্যের সেই ধারায় বেশ ভাটা পড়েছে। এর মূল কারণ খেলোয়াড়দের প্রয়োজনীয় তত্ত্বাবধানসহ পৃষ্ঠপোষকতার অভাব।
কুষ্টিয়ার ক্রীড়া কর্মকর্তাদের নিষ্ঠা এবং সততার অভাবে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের একসময়ের অন্যতম প্রধান জেলার খেলাধূলার বর্তমানে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। তবে এতকিছুর মাঝেও এখনো এ জেলার ক্রীড়াঙ্গনে রয়েছে অবারিত সম্ভাবনা। সঠিক দিকনির্দেশনা থাকলে আবারও দেশের ক্রীড়াঙ্গনে চালিকাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে কুষ্টিয়ার। এমন মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
‘সাংস্কৃতিক রাজধানী’ খ্যাত কুষ্টিয়া জেলার ক্রীড়ার রয়েছে আলোকিত ইতিহাস। অনেক গুণী ক্রীড়াবিদ এ জেলার নামডাক সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম ক্রিকেটার হাবিবুল বাশার সুমন, আহমেদ কামাল কর্ণেল, ‘বাংলাদেশের ম্যারাডোনা’ খ্যাত ফুটবলার সৈয়দ রুম্মান বিন ওয়ালী সাব্বির, মামুন জোয়াদ্দার, শুটার সাইফুল আলম চৌধুরী রিংকী, আরদিনা ফেরদৌস আঁখি, তৌফিক শাহরিয়ার চন্দন, সাঁতারু রুবেল রানা, সবুরা খাতুন, প্রয়াত অ্যাথলেট শাহ্ আলমসহ আরও অনেকে। শুধু তাই নয়, সাবেক দুইবারের তথ্যমন্ত্রী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি, কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর) আসনের সাবেক এমপি হাসানুল হক ইনুও একসময় খেলার মাঠ মাতিয়েছেন। ৬০-এর দশকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের গোলরক্ষক হিসেবে বেশ সুনাম অর্জন করেন ইনু।
এ জেলার আরেক সাবেক এমপি (কুষ্টিয়া-৪; কুমারখালী-খোকসা) ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জও একসময় খ্যাতনামা ফুটবলার ছিলেন। নব্বইয়ের দশকে ফুটবলের রমরমা সময়ে তিনি স্ট্রাইকার হিসেবে মাঠ মাতিয়েছেন। পেশাদার ফুটবলার হিসেবে ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত খেলেছেন অগ্রণী ব্যাংক ও বাড্ডা জাগরণী সংসদে। জর্জ কতটা প্রতিশ্রুতিশীল ফুটবলার ছিলেন সেটা বোঝা যায় সাবেক তারকাদের কথায়। সাবেক তারকা ডিফেন্ডার কায়সার হামিদ বলেন, ‘একজন দক্ষ খেলোয়াড় ছিলেন জর্জ। খেলা চালিয়ে গেলে ভাল একজন ফুটবলার পেত দেশ।’ পরবর্তীতে রাজনীতিতে মনোনিবেশ করায় খেলার মাঠ ছেড়েছেন তারুণ্যের প্রতীক জর্জ।
এছাড়া কুষ্টিয়ার ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলার নাম লাঠিখেলা। আধুনিককালেও গ্রামাঞ্চলের মানুষের বিনোদনের অন্যতম প্রধান উৎস এই খেলা। খেলাটি হয়ে থাকে বাঁশের লাঠি আর ঢোলবাদ্যসহ। দুই জন লাঠিয়াল চৌকষ ও মনোমুগ্ধকর এই খেলা খেলে থাকেন। সারাদেশের লাঠিয়ালদের সংগঠিত করে একে জাতীয় রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন কুষ্টিয়ার সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি ‘ওস্তাদ ভাই’ নামে পরিচিত ছিলেন। সেই ১৯৩৩ সালে সিরাজুল ইসলাম ‘বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী’ নামে এক সংগঠনের মাধ্যমে লাঠি খেলোয়াড়দের সংগঠিত করেন। বর্তমানে আবদুল্লাহ আল মামুন তাজু প্রাচীন এই খেলাকে ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
সুনাম ও মর্যাদার দিক দিয়ে এখন পর্যন্ত কুষ্টিয়ার ক্রীড়াঙ্গনের সেরা নাম হাবিবুল বাশার সুমন। বাংলাদেশের ক্রিকেট যে এখন শক্ত ভীতের উপর দাঁড়িয়ে সেটা বাশারের বুক চিতিয়ে ব্যাটিং ও দক্ষ নেতৃত্বের কারণেই হয়েছে। বাংলাদেশ টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর বাশারের সাহসী ব্যাটিং মুগ্ধ করেছে গোটা ক্রিকেট দুনিয়াকে। স্টাইলিশ এই ব্যাটসম্যানই দেশের ক্রিকেটারদের মানসিকতার পরিবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। এখন যে বাংলাদেশ সেরা ক্রিকেট খেলিয়ে দেশের একটি এই ধারাটা এসেছে মূলত কুষ্টিয়ার ছেলে বাশারের সাহসীকতা ও সুদক্ষ নেতৃত্বের কারণে। অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর বাংলাদেশ দলে আমূল পরিবর্তন আনেন সাবেক ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশ দলের বর্তমান ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্ত্তজার আগে বাশারই ছিলেন দেশের সেরা অধিনায়ক। দীর্ঘদিন টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও ছিলেন বাশার।
১৯৯৫ সালে একদিনের ক্রিকেটে শারজায় শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে অভিষেক হয় বাশারের। এই ফরমেটে তিনি শেষ ম্যাচ খেলেন ২০০৭ সালের ১২ মে ভারতের বিরুদ্ধে। আভিজাত্যের টেস্ট ক্রিকেটে বাশারের অভিষেক বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে। অনেক নাটকীয়তার পর দলে জায়গা পেয়ে ২০০০ সালে ভারতের বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্টে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছিলেন। আট বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে ২০০৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচ খেলেন। বাশারের ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় অর্জন ২০০৭ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন। এ অর্জন তাঁর একার নয়, সমগ্র কুষ্টিয়াবাসীর। খেলার মাঠ ছাড়লেও খেলাধূলার সাথেই জড়িয়ে আছেন সদা হাস্যোজ্জ্বল এই নিপাট ভদ্রলোক। দীর্ঘদিন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের নির্বাচক হিসেবেও কাজ করেছেন হাবিবুল বাশার। সফলতার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালনের পর এখন তিনি বিসিবি নারী বিভাগের হেড অব অপারেশন্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ক্রিকেটের পর শুটিং থেকেই বেশি আন্তর্জাতিক সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। এই সাফল্যের গর্বের অংশীদার কুষ্টিয়ার ক্রীড়াবিদরা। বিশেষ করে শূটার সাইফুল আলম চৌধুরী রিংকী। রিংকী ১৯৯৩ সাফ গেমসে ২টি ও ১৯৯৫ সাফ গেমসে ৩টি স্বর্ণপদক জয় করেন বাংলাদেশের হয়ে। এছাড়া ১৯৯১ সালের সাফ গেমসে ১টি রৌপ্যপদক এবং ১৯৯৫ সালের প্রথম কমনওয়েলথ শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপে ১টি করে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জপদক জয় করেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই তারকা মাধ্যমিকে পড়ালেখা করেছেন কুষ্টিয়া হাইস্কুলে। এরপর উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছেন কুষ্টিয়া সরকারী কলেজে। ১৯৬৮ সালের ২৮ অক্টোবর জন্ম নেয়া রিংকী ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে হওয়া অলিম্পিক গেমসে বাংলাদেশের পতাকা বহন করেন। রিংকীর স্ত্রী সাবরিনা সুলতানাও বাংলাদেশে শূটিংয়ের অন্যতম সেরা তারকা। সাফ গেমস, কমনওয়েলথ গেমসে একাধিক স্বর্ণপদক জিতেছেন সাবরিনা। বর্তমানে রিংকী কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশনের সাথে নিজেকে জড়িত রেখেছেন।
অন্যান্য খেলাধূলায় ভাটা পড়লেও শূটিংয়ে এখনও সুনাম ধরে রেখেছেন কুষ্টিয়ার ক্রীড়াবিদরা। এক্ষেত্রে কুষ্টিয়া রাইফেল ক্লাব অনবদ্য ভূমিকা রেখে চলেছে। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ক্লাবটি শুধু খুলনা বিভাগ নয় দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাইফেল ক্লাব হিসেবে পরিচিত। পূর্বের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে বর্তমান সময়েও কুষ্টিয়ার শূটাররা সাফল্য পাচ্ছেন। এদের মধ্যে শীর্ষ নাম প্রমীলা শূটার আরদিনা ফেরদৌস আঁখি। সুনয়না এই শূটার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ধারাবাহিকভাবে সাফল্য পেয়ে চলেছেন। এখন পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ে ২০টির বেশি স্বর্ণপদক জিতেছেন। দেশের হয়ে আঁখির সেরা সাফল্য ২০১৬ সালে এসএ গেমসে দলীয়ভাবে রৌপ্যপদক জয়। চৌড়হাসের এই মেয়ে পড়ালেখা করেছেন কুষ্ট্য়িা সরকারী বালিকা বিদ্যালয় ও কুষ্টিয়া সরকারী মহিলা কলেজে। কুষ্টিয়া রাইফেল ক্লাবের তিন শুটার শাহরিয়ার রুস্তম, হাফিজুর রহমান সাগর ও ইমরান হোসেন ২০১৩ সালে হওয়া বাংলাদেশ গেমসে স্বর্ণপদক জয় করেন। আরেক শুটার তৌফিক শাহরিয়ার চন্দনও ধারাবাহিকভাবে অবদান রেখে চলেছেন।
বাংলাদেশের ফুটবলে ‘ম্যারাডোনা’ হিসেবে পরিচিত সৈয়দ রুম্মান বিল ওয়ালী সাব্বির। যাকে বলা হতো প্রতিপক্ষের ত্রাস। ছিপছিপে হালকা-পাতলা গড়নের দেখতে ছোটখাট ফুটবলারটি দ্রুতগতিতে ছুটে যেয়ে যেভাবে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাবে ত্রাসের সৃষ্টি করতেন, তাতে বিস্মিত না হয়ে পারা যেতো না। কখনো রাইট উইং দিয়ে, কখনো মধ্যমাঠ দিয়ে ঢুকে পড়ে তিনি দলের প্রতিটি আক্রমণের নেতৃত্ব দিতেন। অসাধারণ ড্রিবলার এই ফুটবলারের বলের ওপর দখল, ডজিং, পাসিংÑসবই ছিল নিখুঁত। উইথ দ্য বল অসম্ভব স্পিডি ছিলেন সাব্বির। গোলের উৎস তৈরি করে দেয়ার পাশাপাশি চকিতে অসংখ্য গোল এসেছে তাঁর পা থেকে।
অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার পজিশনে খেলা তুখোড় এই ফুটবলারের জন্মস্থান নিয়ে অনেকের কাছেই ধ্রমজাল আছে। তবে অনেকটাই প্রচারবিমুখ সাব্বিরের কাছ থেকে জানা গেছে, ১৯৬৮ সালের ৫ জুন কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে জন্ম তাঁর। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত একটানা ১১ বছর মোহামেডানের হয়ে খেলেন তিনি। ফর্মের তুঙ্গে থাকাবস্থায় ১৯৯৪ সালে পিডব্লিউডির সঙ্গে খেলায় মারাত্মকভাবে পায়ে আঘাত পেয়ে তিনি ফর্ম হারিয়ে ফেলেন। অতীতের দ্রুতগতিসম্পন্ন সাব্বির যেন হারিয়ে যান অতল গহ্বরে! মধ্যমাঠে গেম মেকার সাব্বিরকে ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতি সেরা ফুটবলার নির্বাচিত করে। ১৯৯১ সালে পান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার। দুরন্ত গতির ফুটবলার সাব্বির প্রতিপক্ষের সমীহ যেমন আদায় করেছেন, তেমনি অর্জন করেছেন অগণিত ভক্তের ভালোবাসা।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ঈর্ষনীয় সাফল্যের আরেক ইভেন্টের নাম সাঁতার। এখানেও নেতৃত্ব দিয়েছেন কুষ্টিয়ার কৃতি ক্রীড়াবিদরা। এদের প্রায় সবারই বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা গ্রামে। আমলার খালে, পুকুরে যরা সাঁতার শিখেছেন, তাঁদের অনেকেই আলো ছড়াচ্ছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। এই দলে আছেন নৌবাহিনীর রুবেল রানা, অনিক ইসলাম, আসিফ রেজা, নাজমা খাতুন, সীমা খাতুন, সুবর্ণা খাতুন। আছেন ‘জলকন্যা’ খ্যাত সাঁতারু সবুরা খাতুন। এছাড়া লাবণী আক্তার জু্ইঁ, লাবণী আক্তার, ববিতা খাতুন, জুয়েল আহমেদের মতো সাঁতারুরা আছেন সেনাবাহিনীতে। জাতীয় পর্যায়ে তো আমলার সাঁতারুরাই একচ্ছত্র দাপট দেখিয়ে চলেছেন।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তাদের অবদান কম নয়। পাকিস্তানের ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত নবম সাফ গেমসে আমলার সাঁতারু রুবেল রানা স্বর্ণপদক জয় করেন। এখন পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন রেকর্ডসহ এখানকার সাঁতারুরা অর্জন করেছেন শতাধিক স্বর্ণপদক। সাঁতারে আমলার তরুণদের খ্যাতির এই গল্প এখানেই শেষ নয়। সাঁতারে কৃতিত্ব দেখিয়ে আমলা থেকে সেনাবাহিনীতে চাকরি পেয়েছেন ৪২ জন, আনসার-ভিডিপিতে ১৯ জন, নৌবাহিনীতে ১৫ জন, বিমানবাহিনীতে ৩ জন। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন অনেকে। সাঁতারে কৃতিত্বের সূত্র ধরে একটি উপজেলার একটি ইউনিয়ন থেকে এতজনের চাকরি পাওয়ার ঘটনা বিরল। এমন স্বর্ণসাফল্যের কারিগর আমিরুল ইসলাম। তার হাত ধরেই ১৯৮৬ সালে গড়ে ওঠে আমলা সুইমিং ক্লাব।
এরপর সাফল্য বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে ক্লাবের সংখ্যা। সাগরখালী, লালন শাহ, গড়াই ও মেহেরপুর সুইমিং ক্লাব নামে আরও চারটি ক্লাব গড়ে উঠেছে আমলায়। এসব ক্লাবে প্রায় ২০০ জন সদস্য নিয়মিত সাঁতার প্রশিক্ষণ নেন। এর মধ্যে প্রায় ৬০ জন নারী। এই পাঁচটি ক্লাবই বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের অনুমোদন পেয়েছে। এদের সুবিধার কথা চিন্তা করে আমলাতে জাতীয় মানের সুইমিংপুল নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে কুষ্টিয়া শহরের স্টেডিয়াম চত্বরে দেশের তৃতীয় বৃহৎ আধুনিকমানের সুইমিংপুল করা হয়েছে। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে সুইমিংপুলটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
আরও অনেকেই আছেন যারা কুষ্টিয়ার ক্রীড়াঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছেন। এর মধ্যে শীর্ষ নাম ধারাভাষ্যকার আলফাজ উদ্দিন আহমেদ। একসময় তিনি একাধারে খেলেছেন ক্রিকেট, ভলিবল ও ব্যাডমিন্টন। এখন অনেকটা আড়ালে চলে গেলেও একটা সময় ডা. অনুপম হোসেনও বেশ সুনাম অর্জন করেন। চলচ্চিত্র জগতের খলনায়ক হিসেবে আহমেদ শরীফকে সবাই চিনেন। কুষ্টিয়ার এই সন্তানের প্রকৃত নাম সরফুদ্দিন আহমেদ খোকন। তিনি এক সময় ফুটবল, ক্রিকেট ও ব্যাডমিন্টনে কৃতিত্বের সাথে খেলেছেন। মীর শরীফ হাসান স্বাধীনতার পর ৮০০ ও ১৫০০ মিটার দৌড়ে বাংলাদেশে একাধিকবার প্রথম স্থান অধিকার করে কুষ্টিয়ার সুনাম বৃদ্ধি করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীর চর্চা বিভাগে অতিরিক্ত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার অন্যতম কৃতি অ্যাথলেট ছিলেন প্রয়াত শাহ্ আলম। তিনি ১৯৮৫ ও ১৯৮৭ সালের সাফ গেমসে ১০০ মিটার দৌড়ে স্বর্ণপদক জিতে দ্রুততম মানব হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
এছাড়া বিভিন্ন সময়ে আলো ছড়ানো ক্রীড়াবিদদের মধ্যে আছেন প্রয়াত বাবু তারকনাথ চৌধুরী, খন্দকার আবুল হাসান, রেজাউর রহমান খান চৌধুরী, শামসুল আলম দুদু, মুহম্মদ আব্দুর রশিদ, শেখ মাহতাব উদ্দিন, ফটিক দত্ত, ময়েন উদ্দিন আহমেদ মইন, আমজাদ আলী খান, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড় মনিরুজ্জামান পিয়ারাসহ আরও অনেকে। ব্যক্তিগত পর্যায় ছাড়াও বিভিন্ন দলগত খেলাতেও তাক লাগানো সাফল্য পেয়েছে কুষ্টিয়া জেলা। একটা সময় ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবলসহ অন্যান্য ইভেন্টে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কুষ্টিয়া। তবে যুগে যুগে কুষ্টিয়ার ক্রীড়াঙ্গন আলোকিত হলেও বর্তমানে যেন স্থবিরতা বিরাজ করছে! হাতেগোণা কিছু ইভেন্ট বাদে বর্তমানে জাতীয় পর্যায়ে কুষ্টিয়ার ক্রীড়াবিদদের দাপট নেই বললেই চলে।
যে কারণে ক্রীড়াঙ্গনে সফল ও পরিচিত একটি জেলার নাম ধীরে ধীরে ধূলোয় মিশে যেতে বসেছে। কুষ্টিয়ার ক্রীড়াঙ্গনের এমন অবস্থায় ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার সময় এসেছে সাবেক সফল ক্রীড়াবিদ কিংবা পরীক্ষিত সংগঠকদের। এক সময়ের সমৃদ্ধ ক্রীড়াঙ্গনকে আবার চাঙ্গা করতে প্রয়োজন কার্যকরী উদ্যোগ। স্বর্ণালী অতীতকে ফিরিয়ে আনতে সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার বিকল্প নেই বলে মনে করেন জেলার সাবেক ও বর্তমান ক্রীড়াবিদ থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সংগঠকরা।

লেখক : স্পোর্টস ইনচার্জ, দৈনিক জনকণ্ঠ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category