এখন খবর প্রতিবেদক॥
ছাত্রলীগের নির্মম নির্যাতনে নিহত কুষ্টিয়ার সন্তান বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের নামে নামকরনকৃত নব নির্মিত সাড়ে ৮ হাজার দর্শক ধারন ক্ষমতার কুষ্টিয়া ষ্টেডিয়ামটি আজ বৃহস্পতিবার উদ্বোধন করা হয়েছে।এদিন দুপুরে এই ষ্টেডিয়াম মাঠে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে এটির উদ্বোধন করেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। এর আগে ১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস এলাকায় প্রতিষ্ঠিত কুষ্টিয়া ষ্টেডিয়ামটি ২০২০ সালে নাম বদলে শেখ কামাল স্টেডিয়াম করা হয়েছিল। এরপর পুরনো ষ্টেডিয়াম ভেংগে ৪০ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মান করা হয় দৃষ্টিনন্দন এক নতুন ষ্টেডিয়াম। তখন নির্মানাধীন এই ষ্টেডিয়ামটি নিহত বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদের নামে নামকরনের দাবি উঠলে গতবছর নভেম্বরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কুষ্টিয়া ষ্টেডিয়ামকে নতুন নাম “শহীদ আবরার ফাহাদ ষ্টেডিয়াম” নামে নামকরন করে।
উদ্ধোধনের অপেক্ষায় থাকা আধুনিক মানের এই স্টেডিয়ামটি আজ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার উপস্থিতিতে উদ্বোধন করার পর পুর্নতা পেল।
উদ্বোধনের পর ষ্টেডিয়াম মাঠে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেন, আবরার ফাহাদ শুধু একটি নাম নয়,আবরার ফাহাদ আমাদের আগ্রাসন বিরোধী লড়াইয়ের একটা জার্নি। সেই জার্নির অন্যতম অর্জন হচ্ছে জুলাই গনঅভ্যুথান। জুলাই গনঅভ্যুথানে এদেশের তরুনরা জীবন দেবার প্রেরনা পেয়েছে আবরার ফাহাদের থেকে। জুলাই গনঅভ্যুথানে আগ্রাসন থেকে মুক্তির জন্য এদেশের তরুনেরা ঝাকে ঝাকে ঝাপিয়ে পড়েছিল রাজ পথে এবং অবশেষে আমরা আগ্রাসন শক্তির বাংলাদেশীয় সবচেয়ে বড় খুটি শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ থেকে পালাতে বাধ্য করতে সক্ষম হয়েছি। সেই আবরার ফাহাদের নামে কুষ্টিয়া ষ্টেডিয়ামের নাম হওয়া এই এলাকার তরুনরা বেশি বেশি করে খেলাধুলায় মনোনিবেশ করে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভাবে সম্মান অর্জন করবে বলে আমার বিশ্বাস।
এই অনুষ্ঠানে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোঃ তৌফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব আমিনুল ইসলাম, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান,শহীদ আবরার ফাহাদের বাবা বরকতউল্লাহ ও মা রোকেয়া খাতুন বক্তব্য রাখেন। এসময় জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের পদস্থ অন্যান্য কর্মকর্তা ও ছাত্র জনতার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আন্তজার্তিক মানে নির্মিত এই শহীদ আবরার ফাহাদ ষ্টেডিয়ামে ক্রিকেট মাঠের পাশাপাশি ফুটবল খেলারও সব ধরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
কুষ্টিয়া জেলা ক্রীড়া অফিসার ও ক্রীড়া পরিষদের সদস্য সচিব তানভির হোসেন জানান, ‘জুলাই-আগস্টে বিপ্লবের পর কিছুদিন নির্মান কাজ বন্ধ ছিল তখনও কিছু কিছু কাজ ক্রীড়া পরিষদসহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদারকি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ৪০ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত খুলনা বিভাগের মধ্যে এক মাঠে দুই খেলার এটিই প্রথম স্টেডিয়াম।
শহীদ আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ এবং মা রোকেয়া খাতুন বলেন, ওর বয়সতো অল্প ছিল। তার পরও ওর মধ্যে যে দেশ প্রেম ছিল যার জন্য ওকে প্রাণ দিতে হয়েছে।আমরা আগে জানতাম না কি নাম ছিল এই স্টেডিয়ামের। কেননা আমরাও একজন বাবা মা। আমাদেরও সন্তান আছে, সন্তান গেছে। তার পরও কুষ্টিয়াসহ দেশের মানুষের আবরারের প্রতি যে ভালোবাসা মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের আবরারকে জান্নাত বাসী করুন।তারা বলেন, এই স্টেডিয়াম নামকরণের ফলে কুষ্টিয়াসহ দেশবাসীর কাছে চীর দিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে আমাদের আবরার।
উল্লেখ্য, একটি ফেসবুক পোস্টের জের ধরে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর দিবাগত মধ্য রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মীর নির্মম নির্যাতনে নিহত হন ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। আবরার ফাহাদ ১৯৮৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি কুমারখালী উপজেলার রায়ডাংগা গ্রামে জন্মগ্রহন করেন।
এর আগে সকালে কুষ্টিয়া পৌছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুইয়া কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙা গ্রামে শহীদ আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারত করেন এবং আবরার ফাহাদের নামে একটি মসজিদের নির্মান কাজের উদ্বোধন করেন।
শেষে দুপুরের পর তিনি জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শিল্পকলা এ্যকাডেমী মিলনায়তনে সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী, সুধীজন, সুশীল সমাজ এবং সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন।