মন্জুর এহসান চৌধুরী॥
নীতি বর্জিত সাংবাদিকতা, ক্ষমতার পদলেহন, স্বার্থান্বেষী মতবাদ, জনবিচ্ছন্নতায় পক্ষপাত, নির্লজ্জ মিথ্যে প্রচারের দেড়যুগ পর বাংলাদেশ এক ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার স্বাধীন দেশে এখন সংবাদপত্র বুক ভরে শ্বাস নিতে পারছে বলে আশা করা যেতেই পারে। চলমান পত্রিকার রাজপথে প্রচন্ড যানজট ভেদ করে কুষ্টিয়ায় আরো একটি দৈনিক গর্ভ থেকে ভুমিষ্ট হতে চলেছে জানতে পেরে আতংকিত হলাম প্রথম। এই পতিত অর্থনীতির সামনে দাড়িয়ে এক নবজাতক কিভাবে মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াবে এটা ভাবতেই হৃদপিন্ডের স্পন্দন বেড়ে যায়। তবুও কুষ্টিয়ার মানচিত্রে অনেকগুলো পত্রিকার বিকিরণ আকৃষ্ট করে বাংলাদেশকে। তাই এই বাগানে অংকুরদ্দোম হচ্ছে একটি নতুন পত্রিকা আর যার হাতে এটা লালন হবে সে এই জনপদে পয়ত্রিশ বছরের বেশী সময় সেবা দিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে বলা যায়, ভালোই হবে এই নবাগতর বেড়ে উঠা।
যাই হোক, কানাডার মন্ট্রিয়ল নগরীতে বাসায় বসে রাত দেড়টার দিকে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিতীয় টেস্ট ক্রিকেটের তৃতীয় দিনের খেলা দেখছিলাম। বাংলাদেশ বোলিংএ পাকিস্তানের উইকেট নিয়মিত বিরতিতে পড়ে চলেছে। এরই মধ্যে হঠাৎ আমার মোবাইলে রিং বেজে উঠলো। তারিকুল হক তারিক কুষ্টিয়া থেকে কল করেছে।
আমার বাবা ওয়ালিউল বারী চৌধুরী সম্পাদিত সাপ্তাহিক ইস্পাত পত্রিকা আমার প্রকাশনার দায়িত্ব কালে প্রথম এই তারিক ছেলেটার সাথে পরিচয় হয়, তখন সে স্কুলের ছাত্র। কবিতা প্রকাশ করার জন্য সংবাদপত্র অফিসে এসেছিল। সেদিন আমি তাকে নিরুৎসাহিত করেছিলাম। বলেছিলাম কবিতার থেকে সাংবাদিকতা অনেক শক্তিশালী, যা দিয়ে সহজেই গণমানুষের কাছে পৌছানো যায়। তোমার মধ্যে যে মেধা রয়েছে সেটা দিয়ে আমাদের এই সমাজের কল্যাণ করতে পারো, মানুষের উপকার করতে পারো।
তারপর তার শুরু হলো ছোট ছোট সংবাদ তৈরীর কাজ। ১৯৯১ এর ৮ মে যখন আমি নিজেই দৈনিক পত্রিকা আন্দোলনের বাজার প্রকাশ শুরু করি। তখন সে টকবগে যুবক। ঢাকা থেকে প্রকাশিত আজকের কাগজের কুষ্টিয়ার প্রতিনিধি হয়ে বেশ সুনামের সাথে সাংবাদিকতা করছে। আমার পত্রিকাতে সে সময় দিতে শুরু করলো। এক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সাংবাদিক নতুন নতুন কৌশলে সমৃদ্ধ করে চলেছে সাংবাদিকতাকে। আজকের কাগজ থেকে একটা অংশ বের হয়ে এসে ভোরের কাগজ প্রতিষ্ঠা করে, সেই অংশের সাথে তারিকও চলে যায় ভোরের কাগজে। তারপর সেখান থেকে বের হয়ে একগুচ্ছ সাংবাদিক যাত্রা শুরু করে নতুন এক দৈনিকে যে সংবাপত্র দাপটের সাথে বাংলাদেশে সবাইকে পিছনে ফেলে দিয়ে প্রথম আলো হয়ে আসলো। সেখানে তারিক শুরু থেকে কুষ্টিয়া প্রতিনিধি পরবর্তিতে স্টাফ রিপোর্টারে পদান্নতি লাভ করে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে কোন একটি শীর্ষ স্থানীয় জাতীয় দৈনিকের অনুমোদিত জেলা পর্যায়ে অফিস যেটা গড়ে উঠে তারিকের হাত ধরে প্রথম আলোর কুষ্টিয়া অফিস। এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি, কালের কণ্ঠ নামের একটি জাতীয় দৈনিক আত্মপ্রকাশের সাথে সহযোদ্ধা হয়ে তারিক সরাসরি ষ্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগদান করে এখন পর্যন্ত সেখানেই কর্মরত রয়েছে। সেই সাথে কুষ্টিয়াতে পত্রিকাটির অফিস স্থাপন করে সাংবাদিকতা চালিয়ে যাচ্ছে বর্তমান সময় পর্যন্ত।
একজন পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে জেলা পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়ে জেলার পাওয়া না পাওয়া, অভাব অভিযোগ, রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক, ক্রীড়া সবক্ষেত্রে তারিকের বিচারন তাকে আরো সমৃদ্ধ করে তোলে। এখানে উল্লেখ করা যায় নব্বই দশকের শেষে বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারী টেলিস্ট্ররিয়াল স্যাটেলাইট টেলিভিশন ‘একুশে টিভি’র প্রতিনিধি হিসেবেই প্রথম থেকে কুষ্টিয়ার দায়িত্বে নিয়োগ পেয়েছিল তারিক। কিন্তু প্রথম আলোর শর্তের কারনে তাকে সেই দায়িত্ব পরবর্তিতে ছেড়ে দিতে হয়।
সাংবাদিক নেতৃত্বে পেশাদার সাংবাদিকদের সফলতা থাকে না। তারিকের ক্ষেত্রেও সেটা তেমন একটা নেই। ক্রীড়া লেখক সমিতি কুষ্টিয়ার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে একাধিকবার দায়িত্ব পালন করেছে। বর্তমানে জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতির দয়িত্বে রয়েছে। বেশ কয়েকটি প্রকাশনা প্রকাশ করেছে তারিকুল হক তারিক, তার মধ্যে সাংবাদিকতা নিয়ে তার নিজের সম্পাদিত সাংবাদিকতার দেড় যুগ এবং খবরের আগে ও পরের খবর বই দুটি উল্লেখ করার মত।
প্রত্যাশা পূরনের অংগীকার নিয়ে সব পত্রিকাই তার যাত্রা শুরু করে কিন্তু জনগন বা পাঠকের চাহিদা থাকে অপরিসীম, তাই কোন সংবাদপত্রের পক্ষেই সব পুরন করা কখনোই সম্ভব হয়ে উঠে না। সংবাদ যখন একটি জাতি বা গোষ্টির স্বার্থ সংরক্ষন করবে ঠিক তখনই বিরাগভাজন হবে তার বিপক্ষ শক্তির কাছে, এটাই স্বাভাবিক।
তাই আজকের এই শুভক্ষনে ভালো কিছু আশা করা উচিত বলেই আমি মনে করি। শত সংবাদপত্রের জেলা কুষ্টিয়ায় খুব বেশি সংবাদপত্রে শুরুর সংখ্যায় আমি আমার তেমন কোনো লেখা প্রকাশ করি নাই। তার কারন আমার সরাসরি কথাগুলো সবার পছন্দ নয়। তবু তারিকের অনুরোধের প্রেক্ষিতে নিরপেক্ষ ভাবে লিখলাম। ‘এখন খবর’ নামের এই পত্রিকাটি আত্মপ্রকাশ করছে যার দায়িত্ব নিজে গ্রহন করেছে তারিকুল হক তারিক, আমি তার সার্বিক সফলতা কামনা করি। আশা করি তার সম্পাদনায় এই পত্রিকা কুষ্টিয়ার জনমানুষের স্বার্থরক্ষা একটি দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে পারবে। বাকিটা আগামী দিনে পাঠকরা বিবেচনা করবে।
লিখতে লিখতে খেলা শেষ পাকিস্তানের বিপক্ষে টাইগারদের ধবল ধুলাই দেখলাম। অভিনন্দন রইল ‘এখন খবর’ আর টাইগারদের।।
লেখক: কুষ্টিয়ার আধুনিক মানের প্রথম দৈনিক পত্রিকা আন্দোলনের বাজার-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এবং প্রকাশক। বর্তমানে কানাডা প্রবাসী।