এখন খবর প্রতিবেদক॥
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়ায় পদ্মা নদীতে মাছ ধরার সময় জেলে শরিফুল ইসলামের জালে ২৫০ কেজি ওজনের ১১ ফুট লম্বা একটি কুমির ধরা পড়েছে। দুপুরে ধরা পড়ার পর কুষ্টিয়া বিভাগীয় বন কর্মকর্তারা বিকেলে কুমিরটিকে পদ্মার আরো গভীর পানিতে অবমুক্তির জন্যে তাদের হেফাজতে নিয়েছে। জেলে শরিফুল কুমিরটি নদীর উপরে তোলার পর সেটি দেখতে শথশত উৎসুক মানুষ তালবাড়িয়া ঘাটে ভিড় করেন।
খোজ নিয়ে জানাযায়, প্রতিদিনের মতো আজ মঙ্গলবারও নদীতে মাছ ধরতে যান স্থানীয় জেলে শরিফুল ইসলাম। জাল ফেলার পর সে বুঝতে পারে বড় মাছ ধরা পড়েছে। সেই ভেবে জাল তুলে দেখতে পান কুমির। তখন সঙ্গে থাকা আবজাল ও নুর হোসেনের সহযোগিতায় শরিফুল সেটিকে ডাঙায় তোলার পর শত শত মানুষ কুমিরটি দেখতে আসে এবং সেখানে মানুষের ভিড় বেধে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন জেলার মিরপুর থানা পুলিশ ও বন বিভাগে খবর দেন।
খবর পেয়ে বন বিভাগের কুষ্টিয়া সদর রেঞ্জ অফিসার আতিয়ার রহমান ও মিরপুর উপজেলার বন কর্মকর্তা জুয়েল আহমেদসহ বন বিভাগের কর্মকর্তারা এবং ঘটনাস্থলে আসেন এবং কুমিরটির দৈর্ঘ্য ১১ ফুট এবং ওজন ২৫০ কেজির মতো হবে বলে মন্তব্য করেন।
জেলে শরিফুল ইসলাম জানান, সকালে মাছ ধরার জন্যে পদ্মা নদীতে আমরা জাল ফেলি । জাল তোলার সময় সেটি ভারি লাগছিল। প্রথমে বড় কোনো মাছ আটকা পড়েছে ভেবেছিলাম। পরে জাল কাছে আসার পর দেখতে পায় জালে একটি কুমির আটকা পড়েছে। পরে কৌশলে জাল টেনে নদীর পাড়ে তুলে আমরা স্থানীয় লোকজনকে খবর দিই। এরপর তাদের সহায়তায় কুমিরটি দড়ি দিয়ে বাধি। পরে বন বিভাগ কুমিরটি নিয়ে যায়।
কুষ্টিয়া বন বিভাগের কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান ও ভেড়ামারা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, কুমিরটি উদ্ধার করে আমরা দুপুর আড়াইটার দিকে বন বিভাগের পিকআপে করে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া বন বিভাগ অফিসে নিয়ে আসি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কুমিরটিকে সুস্থ্য করে পরে সেটিকে পদ্মা নদীর গভীর পানিতে অবমুক্ত করা হবে।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র এখন খবরকে বলেন, কুমিরটি লম্বায় ১১ ফুটের বেশি। জেলের জাল থেকে আমরা কুমিরটি উদ্ধার করে নিয়ে আসছি। তিনি বলেন, এটি যেহেতু এটি মিঠাপানির কুমির। সেহেতু এটিকে পদ্মা নদীর গভীর জলে ছেড়ে দেওয়া হবে। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, কোন প্রানীই ধ্বংশ করা যাবে না। জীব বৈচিত্র সংরক্ষণের জন্যে নদীর তীরবর্তী এলাকায় জন সচেতনতা বাড়ানোর জন্যে মাইকিং করার জন্যে বন বিভাগকে নির্দেশ দেয়া হবে।
এদিকে, কুষ্টিয়া শহর সংলগ্ন পদ্মার শাখা গড়াই নদীতে সপ্তাহ ধরে একাধিক কুমির দেখা যাচ্ছে। কুমির দেখতে প্রতিদিন শহরের জুগিয়া ভাটাপাড়া গোরস্থান এলাকায় গড়াই নদীর পাড়ে মানুষ ভিড় করেছে। পাশাপাশি কম পানিতে কুমিরের দেখা পাওয়ায় জেলেরা মাছ ধরতে নদীতে নামতে ভয় পাচ্ছে।
এরআগে গত ২০২২ সালের ৫ নভেম্বরও পদ্মায় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার হার্ডিঙজ সেতুর নিচ থেকে একই ধরনের একটি কুমির ধরা পড়েছিল।
বাংলাদেশ জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ফেডারেশন কুষ্টিয়ার সভাপতি ও পাখি প্রেমী শাহাব উদ্দিন বলেন, নদীর যেখানে সেখানে চর জেগেছে। চর জাগার এক পাশে কিছু পানি জমে আছে। সেই পানিতে মূলত কুমির দেখা যাচ্ছে। ভয় না পেয়ে মানুষ যাতে কুমিরকে আক্রমন না করে সে জন্যে তিনি নদী পাড়ের মানুুষদের প্রতি আহবান জানান।